বাংলাদেশের আটটি বিভাগের একটি হচ্ছে সিলেট। পূর্বকালে সিলেট চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত ছিল। সিলেট বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত পাহাড়ী, সমতল ও হাওর ঘেরা এক অঞ্চল।
সিলেট একটি প্রাচীন জনপদ। প্রাচীনকালে সিলেট বিভিন্ন খন্ডরাজ্যে বিভক্ত ছিল। বাংলাদেশের বিশাল অংশ যখন সাগরের গর্ভে বিলীন, সিলেট তখনও ছিল সভ্য সমাজ। সিলেটের ভাটি এলাকা এক সময় ছিল সমুদ্র। কিন্তু উচুঁ ও পার্বত্য এলাকায় ছিল জনবসতি। ঠিক কোন সময়ে জনবসতির সূচনা হয় তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। ঐতিহাসিক যুগ শুরু হয়েছে খৃষ্টপূর্ব পাঁচ হাজার অব্দে। ইতিহাস বিজ্ঞানীরা ঐতিহাসিক যুগকে প্রাচীন মধ্য ও আধুনিক যুগে ভাগ করেছেন। ইতিহাসের প্রাচীন যুগ থেকে সিলেট জনবসতি শুরুর হদিস পাওয়া যায়। প্রাচীন যুগের ইতিহাসের অবলম্বন প্রায় সর্বত্রই পৌরাণিক গ্রন্থাদি, কিংবদন্তী, তন্দ্রমন্ত্র শিলালিপি প্রভৃতি। এসব উৎস হতে দেখা যায় খৃষ্টপূর্ব চার হাজার অব্দেও সিলেটে উন্নত সমাজ বর্তমান ছিল। প্রাচীনকালেও সিলেট বিভিন্ন খন্ডরাজ্যে চিহ্নিত ছিল। এর আয়তন ও সীমা বারবার বদল হয়েছে এবং অভিহিত হয়েছে বিভিন্ন নামে।
বিভিন্ন গুণীজন সিলেট সম্পর্কে বাণী দিয়ে গেছেন। নিম্নে কয়েকটি বাণী দেওয়া হলঃ
চীন দেশীয় পর্যটক হিউয়েন সাং বলেছেন, ‘‘শ্রীহট্ট একটা প্রাচীন ও গৌরবশালী দেশ’’।
বিশ্ব বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা বলেছেন, ‘‘শ্রীহট্ট পরিক্রমা না হওয়া পর্যন্ত আমার ভারত পরিক্রমা শেষ হলো বলে আমি মনে করি না’’।
মৈথিলী পন্ডিতবৃন্দের মতানুসারে, ‘‘শ্রীহট্ট হলো পূর্ব মিথিলা’’।
মহাভারত রচা ব্যাসদেবের ভাষায়, ‘‘আমার পরমারাধা প্রপিতামহী সতী অরম্নন্ধতী শ্রীভূমির কন্যা ছিলেন’’।
ডক্টর সর্বপলস্নী রাধাকৃষ্ণনের ভাষায়, ‘‘শ্রীহট্ট হলো দার্শনিকদের জন্মভূমি’’।
বাংলার জ্ঞানতাপস সুরেশচন্দ্র সমাজপতির অভিমত, ‘‘যখন আমাদের সমগ্র বঙ্গদেশ সমুদ্রগর্ভে বিলীন ছিল, তখন শ্রীহট্টে আর্য জাতির বিজয় বৈজয়ন্তী উড়েছিল’’।
পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু বলেন, ‘‘লিখিত ও পঠিত ভাষার দিক দিয়ে শ্রীহট্টিয়ার বাঙ্গালী, কিন্তু সমাজগত, কৃষ্টিগত, সংস্কৃতিগত, এমনকি দৈহিক গঠন গাঠনে তারা সম্পূণর্রুপে মৈথিলী’’।
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমাদের বঙ্গদেশ খৃষ্টিয় সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত ব্রাহ্মণশূন্য অনার্যভূমি ছিল। কিন্তু আমাদের পার্শ্ববর্তী শ্রীহট্টাদি অঞ্চলে সুপ্রাচীনকাল থেকে (সত্যযুগ থেকে) ব্রাহ্মণ বসতি ছিল বলে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে’’।
ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘‘আমাদের বঙ্গদেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রভূমি নবদ্ধীপের যে চারটি প্রধান গৌরব, তা শ্রীহট্টিয়া ব্রাহ্মণদের মনীষা প্রসূত’’।
প্রখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক ও বৈষ্ণব সাহিত্যিক অচ্যুতচরণ তত্ত্বনিধির (১৮৬৫-১৯৫৩)ভাষায় ‘‘শ্রীহট্ট হলো পৃথিবীর এক ক্ষুদ্র সংস্করণ’’।
পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের ভাষায়, ‘‘সিলেট একটি কবিত্বময় পরিবেশের আদি নিবাস, এখানে বাস করে কবি না হয়ে পারা যায় না’’।
পাকিস্তানের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৬ সালে সিলেট সফরে এসে বলেছিলেন, ‘‘ইচ্ছে হয় তোমাদের এই সবুজ সুন্দর পরিবেশে আমিও একটি বাড়ি নির্মাণ করি’’।
১৯৪৬ সালে পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু বলেছেন, ‘‘সিলেট ইজ বেঙ্গল বাট উইথ এ ডিফারেন্স’’।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস